৪র্থ মেয়াদে আরও ৩ বছরের জন্য(ইডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পুনরায় নিয়োগ পেলেন প্রফেসর জগলুল

0
1537

সততা আর কর্তব্যপরায়নের জন্য পুরস্কার হিসেবে ৪র্থ মেয়াদে আরও ৩ বছরের জন্য এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পুনরায় নিয়োগ পেলেন প্রফেসর জগলুল। বুধবার (৭ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুল আজিজ শামীম। এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) রাষ্ট্রের মালিকানাধীন অটোনোমাস প্রতিষ্ঠান । তিনি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউপির সুনামগঞ্জ গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তার বাবাও দেশের প্রখ্যাত সুনামধন্য ডাক্তার ছিলেন।
প্রফেসর জগলুলের পুনরায় নিয়োগ পাওয়ার আনন্দে রায়পুর সহ পুরো জেলায় আ’লীগসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীকেও।
এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে প্রফেসর এহসানুল কবির জগলুল বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রধানমন্ত্রীর আস্থা অর্জনে ও ইডিসিএলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করে আগামি দিনে আন্তর্জাতিকভাবে এ শিল্পের মাধ্যমে দেশের সুনাম অর্জন আমার লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, সরকার এই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ওষুধ ৫ ভাগ লাভে ক্রয় করে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে বিতরণ করে থাকেন। বর্তমানে সারা দেশে কোম্পানির পাঁচটি প্ল্যান্ট রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও বগুড়া প্ল্যান্টে ওষুধ, খুলনা প্ল্যান্টে পুরুষ কনডম এবং টাঙ্গাইল প্ল্যান্টে মধুপুর রাবার গাছ থেকে কনডম তৈরির কাঁচামাল উৎপাদন করে। চারটি প্রোডাকশন ইউনিট নিয়ে শিগগির উৎপাদনে যাবে গোপালগঞ্জ ইউনিট। এই প্ল্যান্টেও ওষুধ উৎপাদন হবে। ১৯৬২ সালে এটি সরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবরটেরি (জিপিএল) নামে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কাজ শুরু করে। ১৯৭৯ সালে ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন ইউনিট (পিপিইউ) হিসেবে পুনঃনামকরণ করা হয়।
পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে ১৯৮৩ সালের ১০ আগস্ট ইডিসিএল নামে নতুন করে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ইডিসিএল শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন অটোনোমাস প্রতিষ্ঠান ও একমাত্র অত্যাবশ্যকীয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রতিষ্ঠানটি ওর‌্যাল স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক সেফালোস্পরিন, ইনজেকশন, প্যারাসিটামল, কনডমসহ ১২৬ ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী উৎপাদন করছে। সারা দেশের সব সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং সরকারি মালিকানাধীন করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ডবিøউএইচও, বিশ্বব্যাংক ও ইউনিসেফের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে। এর মধ্যে দেশের সব সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকের শতভাগ ওষুধ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডাক্তার জগলুল বলেন,-ইডিসিএল ইতিমধ্যে মিয়ানমার, ভিয়েতনামা এবং ভুটানে ওষুধ রপ্তানি করছে। তাছাড়া শ্রীলঙ্কায় ইতিমধ্যে সরকারিভাবে ওষুধ রপ্তানি করা হয়েছে এবং চলতি অর্থবছর বিপুল পরিমাণ ওষুধ রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করছি। যেসব বৈদেশিক ক্রেতা ইডিসিএলের ওষুধ আমদানি করতে ইচ্ছুক ইডিসিএল তাদের সন্ধান ও শনাক্ত করছে। গুণগতমান রক্ষায় ইডিসিএল কোনো ধরনের আপস করে না, যার জন্য এর উৎপাদিত ওষুধসামগ্রী সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। গত বছর ৬৪৫ কোটি টাকার ওষুধ বিক্রি করা হয়েছে।
দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে খুলনা প্ল্যান্টে (খুলনা এসেনসিয়াল লেটেক্স প্রকল্প) পুরুষ কনডম উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা প্রাথমিকভাবে বছরে ১৫০ মিলিয়ন পিস ইনস্টল করা হলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে প্রতি বছরে আনুমানিক ২৪৯.৬০ মিলিয়ন পর্যন্ত। উৎপাদিত কনডম পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। প্রতিষ্ঠানটি ইহার গ্রাহক বা ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক কনডম তৈরি করতে সক্ষম। কনডমের কাঁচামাল উৎপাদন হচ্ছে টাঙ্গাইল প্ল্যান্টে। মধুপুর বনের রাবার গাছ থেকে রাবারকষ সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করার পর খুলনায় পাঠানো হয়। এর জন্য ইডিসিএল ১২৭ মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরে এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। প্রাকৃতিক উৎস হতে রাবার সংগ্রহ, ল্যাটেক্স উৎপাদন ও মান নিশ্চিতকরণ এবং বহুবিধ ব্যবহার তথা দেশীয় রাবার শিল্পকে অনুপ্রাণিত করতে এই প্ল্যান্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়-দেশে বর্তমানে প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়নের অধিক পিস কনডমের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ইডিসিএল ১৭০ মিলিয়ন পিস কনডম সরবরাহ করে। এই উৎপাদন ২৫০ মিলিয়ন পিসে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্ল্যান্ট দৈনিক প্রায় ৫ দশমিক ৫ টন ঘনীভূত ল্যাটেক্স উৎপাদন করতে সক্ষম। নিজস্ব চাহিদা পূরণ করে ইএলপিপি র্কর্তৃক উৎপাদিত ঘনীভূত ল্যাটেক্স ইতিমধ্যে বসুন্ধরা পেপার মিল এবং বাংলা-জার্মান কোম্পানি লি.-এর নিকট সরবরাহ করছে।
বিশেষ করে ইডিসিএলের গোপালগঞ্জ প্ল্যান্ট নিয়ে খুবই আশাবাদী র্কর্তৃপক্ষ। ১০ একর জায়গার ওপর প্রকল্পটি হবে। শিগগির প্ল্যান্টের চারটি ইউনিটেই উৎপাদন শুরু হবে। এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় ওষুধ তৈরির কারখানা। জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজকেশন, আইভি ফ্লয়েড, পেনিসিলিন পণ্য ও জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি উৎপাদিত হবে। এই প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ৫৯৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এখান থেকে বছরে ৩ হাজার ৩শ’ মিলিয়ন জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, ৩ হাজার ২ মিলিয়ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, ১৮১ মিলিয়ন পেনিসিলিন ট্যাবলেট ও ২১৭ মিলিয়ন পেনিসিলিন ক্যাপসুল উৎপাদন সম্ভব হবে।
এখানে উৎপাদন হবে জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক। এ ছাড়া আইভি ফ্লুইড, ইন্টারফেনাস ইনজেকশন, আয়রন ট্যাবলেট এবং সব ধরনের স্যালাইন উৎপাদন করা হবে। এতে দেশে ওষুধের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে এবং বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। ইডিসিএলের এই কারখানায় ৮শ লোকের কর্মসংস্থান হবে। শুধু তাই নয়, এই শিল্প কারখানাকে ঘিরে আরও ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে এই অঞ্চলে। কাঁচামাল, খাবার, প্রিন্টিং, প্যাকেজিং, আবাসিক হোটেলসহ অনেকগুলো লিংকেজ শিল্পও গড়ে উঠবে। গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণ বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থায় অনেক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে ইডিসিএল।
ইডিসিএলে উৎপাদিত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রাম পজিটিভ এবং গ্রাম নেগেটিভ অঙ্গের বিরুদ্ধে সক্রিয়। আধুনিক বিজ্ঞানে এর বিকাশ ও নমনীয়তা প্রথম জেনারেশন থেকে চতুর্থ জেনারেশন পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে। একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সিজিএমপি (কারেন্ট গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) অনুযায়ী এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক একটি সম্পূর্ণ পৃথক কারখানায় উৎপাদিত হয়। এ জন্য ইডিসিএল বগুড়াতে একটি নতুন পৃথক সেফালস্পিরিন উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করেছে। এটা বাংলাদেশ সরকারের চাহিদা মিটিয়ে সরকারি ওষুধ নিয়মনীতি মেনে দেশের অন্যান্য ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য চুক্তিভিত্তিতে সেফালস্পিরিন পণ্য উৎপাদন করতে সমর্থ হবে।
নতুন ওষুধ আবিষ্কার ও উন্নয়ন গবেষণা করতে ২০১০ সালে ইডিসিএল ঢাকা প্ল্যান্টের মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগে একটি গবেষণা পরীক্ষাগার স্থাপন করা সম্প্রতি এই গবেষণাগারে বিভিন্ন জৈব পদার্থ, যেমন কাসাভা, আলু ও অন্যান্য প্রাকৃতিক জৈব পদার্থ, যা আমাদের দেশে সহজলভ্য এবং সস্তা, তা থেকে এক ধরনের স্টার্চ তৈরি করছে। এই স্টার্চ ট্যাবলেট ও ওষুধের মান বজায় রাখতে ব্যবহার করা হয়। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ যেকোনো ওষুধ উৎপাদন কোম্পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
ইডিসিএলের ঢাকা ও বগুড়া প্ল্যান্টের পরিবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। সিজিএমপি নির্দেশনা অনুযায়ী উৎপাদন এলাকা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, অণুজীব ল্যাবরেটরি, বিতরণ এলাকা, কাঁচামাল ও সমাপ্ত পণ্য এলাকা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী নিয়মিত নজর রাখা হয়।

আপনার মন্তব্য জানান