সিলেটে দীর্ঘদিন থেকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের নামে ‘তামাশা’ চলছে। জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত কয়েকটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ সুবিধা। সেই সাথে উপেক্ষিত হচ্ছে সরকারি নির্দেশনা। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ তদারকির অভাবে এমন কর্মকাণ্ড চলছে। গত দুই দিন আগে সিলেটের ব্রিটেনিয়া হোটেল থেকে ৯ জন পালিয়ে যাওয়া ও লা ভিস্তা হোটেলে বিয়ের আয়োজন নিয়ে সিলেটে তোলাপড় চলছে। এমনকি সিলেটে কোয়ারেন্টাইনে থাকাবস্থায় প্রবাসীদের কেনাকাটাসহ স্বজনদের সাথে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে।প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরেও সরকারের দেওয়া নির্দেশনা না মেনে প্রবাসীদের সাথে নিয়মিত দেখা করছেন আত্মীয়স্বজনরা। প্রবাসীদের এসব অবৈধ সুযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন হোটেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কতিপয় পুলিশ সদস্য ও হোটেলের কর্মকর্তারা। সিলেটের দুটি ঘটনার পর অন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য কঠোর হচ্ছে জেলা প্রশাসন। লা ভিস্তা হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরেও বিয়ের আয়োজন করার সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসন।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার শাম্মা লাবিবা অর্ণব বলেছেন, সরকারের নির্দেশনা না মানায় ইতোমধ্যে হোটেল ব্রিটেনিয়ার সাথে জেলা প্রশাসনের যে চুক্তি ছিল তা বাতিল করা হয়েছে। সেই সাথে লামাবাজারের লা ভিস্তা হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় লন্ডন প্রবাসী এক যুবক বিয়ে করেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, গত ২১ মার্চ আম্বরখানার হোটেল ব্রিটেনিয়া থেকে ৯জন লন্ডন প্রবাসী রহস্যজনকভাবে সিলেটের জকিগঞ্জে চলে যান। সেখানে দুপুরের খাবারের পর তারা দীর্ঘসময় অবস্থান করেন। এরপর বিকাল পর্যন্ত হোটেলে না ফেরায় কর্তৃপক্ষের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। পরে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপে ৯জন প্রবাসী রাত ৮টার দিকে হোটেলে আসেন। এরপর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৬ জনকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ ঘটনায় সিলেটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইদিন রাতেই হোটেল ব্রিটেনিয়ার সাথে চুক্তি বাতিল করে। তবে এখন পর্যন্ত ওই হোটেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অপরদিকে, লন্ডনফেরত এক প্রবাসী সিলেটের লামাবাজার ‘হোটেল লা-ভিস্তা’র অভ্যন্তরে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় গত ২০ মার্চ রাতে বিয়ে করেন। বর হোটেল অবস্থান করলেও কনেকে বাইরে থেকে সাজিয়ে নিয়ে আসেন কনেপক্ষের লোকজন। রাতভর চলে খানাপিনা ও বর-কনের ফটোসেশন। প্রশ্ন উঠেছে ওই হোটেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা কি টাকার বিনিময়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীর হয়ে কাজ করেছেন জানা যায়, গত ১৮ মার্চ লন্ডন থেকে সিলেটে আসা যাত্রীদের মধ্যে ১১ জনকে সিলেটের লামাবাজারস্থ হোটেল লা-ভিস্তায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তাদের মধ্যে দুইজন হলেন সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাঙ্গাইল এলাকার এক নারী (৪৮) বাসিন্দা ও মুহি উদ্দিন (২৮)। মা অবস্থান করেন ৪০১ নম্বর কক্ষে আর তার ছেলে অবস্থান করেন ৪০৬ নম্বর কক্ষে। নিয়ম অনুযায়ী তারা সব ধরনের জনসমাগম ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নির্ধারিত সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার কথা। কিন্তু লা-ভিস্তা হোটেলে ঘটা করে বিয়ে করেন মুহি উদ্দিন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় বিয়ে উপলক্ষে বাইরে বের হয়ে কেনাকাটাও করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবকের মা। যার পুরোটাই হয় হোটেল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে।