দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। সড়কপথে আমদানি করা পণ্যের প্রায় ৮০ ভাগ পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি করে থাকেন আমদানিকারকরা। দেশের চলমান ১২টি স্থলবন্দরের ভেতর সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয় এই বন্দর দিয়ে। বেনাপোল বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার আমদানি-বাণিজ্য হয়, যা থেকে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। তবে ভারত অংশে নানা অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মে দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে এখানকার আমদানি-বাণিজ্য। বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের বনগাঁওয়ে ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের হাতে প্রায় দুই যুগ ধরে জিম্মি বাংলাদেশি আমদানিকারকরা। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ট্রাকযোগে আমদানিপণ্য নিয়ে পেট্রাপোল বন্দরে ঢোকার আগেই ‘অর্থ বাণিজ্যে’ মেতে ওঠে একটি পক্ষ। সিরিয়ালের নামে পার্কিংয়ে জোর করে প্রতিটি ট্রাককে ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। প্রতিদিন বাংলাদেশি আমদানিকারকদের ট্রাকপ্রতি গুনতে হয় ২ হাজার টাকা। ফলে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রায় পাঁচ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে আছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময়ে যেমন পণ্য চালান আটকা পড়ছে, তেমনি পণ্যের গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে শিল্প ও কল-কারখানায়। এতে বাণিজ্য স¤প্রসারণ যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি লোকসানের মুখে পড়ে বেনাপোল বন্দর ছাড়ছেন ব্যবসায়ীরা। বিগত প্রায় দুই যুগ ধরে এ অনিয়ম চলে এলেও সিন্ডিকেটের হাত থেকে কোনোভাবে মুক্তি মিলছে না ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক চেষ্টা করেও সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত হতে পারেননি তারা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বনগাঁও পার্কিংয়ে চাঁদাবাজির কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ পথে আমদানি বন্ধ করেছেন।এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে অভিযোগ তুললেও আজ পর্যন্ত পরিত্রাণ পাননি আমদানিকারকরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে ভারতীয় ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেটের হাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ভারতীয় হাইকমিশনারসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুল জলিল জানান, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বনগাঁও পার্কিংয়ের অনিয়মের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনেকবার কথা বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই এর সমাধান হবে।