পৌষের শীতের পরশ এরই মধ্যে পেয়েছে দেশবাসী। তবে গতকাল শুক্রবার থেকে বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা, বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে। কারণ নীলফামারী, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, যা আগামী চার থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হতে পারে। এটিই এ মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ গতকাল বলেন, উত্তরাঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরো কমবে। শৈত্যপ্রবাহ দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের সবখানে বিস্তার লাভ করতে পারে।গত কয়েক দিনের মতো গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ঘন কুয়াশা ও উত্তুরে হাওয়ায় দেশের উত্তরের জেলাটিতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দ্রুত কমছে তাপমাত্রা। আবারও এই জনপদে তাপমাত্রা নেমে এসেছে এক অঙ্কে। ফলে শীতে কাঁপছে গোটা জেলা; স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
বিশেষ করে গরিব মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণে। একে তো তারা কাজে যেতে পারছে না; দুই. পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে তারা কষ্ট পাচ্ছে। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে খুব কম মানুষই।বেশ কয়েক দিন ধরেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে এই জেলা। তাপমাত্রা কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। প্রায় প্রতিদিনই দুপুর পর্যস্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো জনপদ। দুপুরে খানিক সময়ের জন্য সূর্যের দেখায় উত্তাপ মিললেও বিকেল গড়াতেই তা হু হু করে কমতে থাকে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে চারদিকে বিছিয়ে পড়ে ঘন কুয়াশা। কমে আসে তাপমাত্রাও। মাঝরাতে হাড় কাঁপা শীত অনুভূত হয়। এ অনুভূতি থাকে পরদিন সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আগের দিন বৃস্পতিবার ছিল তা ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বুধবার ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক জিতেন্দ্রনাথ রায় গতকাল বলেন, উত্তরে হিমালয় থেকে সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাস পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তাই এখানে শীতের তীব্রতা একটু বেশি থাকে। তাপমাত্রা অনুযায়ী এখন পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। দিন দিন তাপমাত্রা আরো কমে আসবে। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বড় শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার সারা দেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। পাশাপাশি নীলফামারী, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে এবং এটি দেশের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের সব জায়গায় বিস্তার লাভ করতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশের রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি হ্রাস পেতে পারে।