দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় লক্ষ্মীপুরের রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র (হ্যাচারি) জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় ডুবতে বসেছে।
রায়পুরের এ হ্যাচারিটিতে ৮৩ পদের মধ্যে ৫৮ পদই শূন্য। মাত্র ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী জোড়াতালি দিয়ে কাজ করছেন। তবে সম্ভাবনাময় এ হ্যাচারিকে উজ্জীবিত করতে তিন বছর আগে জনবলসহ ১৩টি সমস্যা চিহ্নিত করে সুপারিশ করেছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। এতে ৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ফাইল আটকে আছে মন্ত্রণালয়ে। এখনও আলোর মুখ দেখছে না।জানা যায়, হ্যাচারি নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটি এখন চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এ হ্যাচারি ঘিরে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে আসছে না। এতে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য।
এখানে উৎপাদিত রেণু-পোনার গুণগত মান ভালো থাকায় দেশের অন্তত ৩৫টি জেলায় তা সরবরাহ করা হয়। প্রতিবছর মৌসুমের সময় প্রতিযোগিতা দিয়ে চাষিরা তা সংগ্রহ করেন, কিন্তু চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ করতে পারছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মৎস্য চাষিদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৮২ সালের জুনে ৫৪ একর জমিতে ও ২১.৮৩ হেক্টর আয়োতনের ৭৫টি পুকুর নিয়ে রায়পুর পৌরসভা পশ্চিম কাঞ্চনপুর গ্রামে হ্যাচারির নির্মাণকাজ হয়। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী এজেডএম ওবায়দুল্লাহ খান এটির উদ্বোধন করেন। গুণগত মানসম্পন্ন রেণু ও পোনার সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং মাঠপর্যায়ে মৎস্য খাতের সঙ্গে নিয়োজিতদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে হ্যাচারিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে রায়পুরের গুরুত্বপূর্ণ এ হ্যাচারি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মৎস্য) অসীম কুমার বালা ও মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. রমজান আলী সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরে তারা ১৩টি সমস্যা চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে তা সমাধানের জন্য সুপারিশ করেন। কিন্তু গত তিন বছরেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
সম্ভাবনাময় এ হ্যাচারিকে উজ্জীবিত করতে তিন বছর আগে জনবলসহ ১৩টি সমস্যা চিহ্নিত করে সুপারিশ করেছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পলি জমে শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য, পুকুরপাড়ের রাস্তাগুলো ভেঙে যাওয়া, পানি সরবরাহের সংযোগ দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় এখন ২০টি পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে। অনেকাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংযোগ বিকল। প্রশাসনিক, আবাসিক, হ্যাচারি, গুদাম, রেস্ট হাউস ভবনগুলো জরাজীর্ণ এবং ব্যবহারের অনুপযোগী।
অনেকাংশে উঁচু সীমানাপ্রাচীর নেই। গাড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম অপ্রতুল। লো-ভোল্টেজ-নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় কার্যক্রমে বেগ পেতে হচ্ছে। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৯টি পুকুর সংস্কারকাজ চলছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১টি সংস্কার করা হবে। অন্য ৩৬টি পুকুর পলি মাটি জমাট থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী রয়েছে।
রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘চাহিদার প্রায় ৩০ শতাংশ সরবরাহ করতে পারছি। ১৩টি সুপারিশ পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ফাইল করোনা ও পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে একনেকে তা ওঠেনি।
তবে তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে উৎপাদিত পোনা-রেণু দিয়ে সারা দেশে বিপ্লব ঘটানো যাবে। লোকবল নিয়োগ দিলে উৎপাদন বৃদ্ধি করে কয়েক গুণ রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে।’