প্রশাসনের কড়াকড়ি ঘরবন্দি মানুষ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে ঢাকায় গ্রেফতার ৫৫০ জন

0
623

সারা দেশে মাঠে ছিল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি * বিধি ভঙ্গের অভিযোগে ঢাকায় গ্রেফতার ৫৫০ জনকরোনার ঊর্ধ্বগতি রোধে কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন (বৃহস্পতিবার) সারা দেশের মানুষ কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। সড়ক মহাসড়ক ছিল একেবারেই ফাঁকা। তবে কোনো কোনো পাড়া-মহল্লায় মানুষের জটলা দেখা গেছে। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছে সব জরুরি সেবাসহ শিল্পকারখানা। বন্ধ ছিল সব ধরনের অফিস-আদালত, গণপরিবহণ, যন্ত্রচালিত যান, শপিংমল-মার্কেট ও দোকানপাট।এ সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির কঠোর তৎপরতা দেখা গেছে। পাশাপাশি ছিল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। যারাই ঘর থেকে বের হয়েছেন তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়াদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে আইনানুগ ব্যবস্থা।

নির্দেশনা অমান্য করায় ঢাকায় ৫৫০ জনকে গ্রেফতার এবং ঢাকার বাইরে শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে। ঢাকার ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২১২ জনকে জরিমানা ও ৩৯১ জনের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। এদিকে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকা হাসপাতাল, ফার্মেসি, শিল্পকলকারখানা ও গার্মেন্টস খোলা থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা চলাচলে অন্তহীন দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছেন। যেতে হয়েছে রিকশা ও ভ্যানগাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়ায়। প্রতিষ্ঠানের পরিচয় থাকলেও অনেককে পুলিশ কর্মক্ষেত্রে যেতে দেয়নি বলে অভিযোগ মিলেছে। কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে গাড়িচালকদের। চেকপোস্ট বসানোর কারণে রাজধানীর গাবতলীর প্রবেশমুখে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।

কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে কাবু হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বুধবার সাত দিনের (গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত) জন্য ২১ দফা বিধিনিষেধ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার প্রধান সড়কগুলো বৃহস্পতিবার এক প্রকার ফাঁকাই ছিল। গুটিকয়েক রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস চলাচল করতে দেখা গেছে। জরুরি সেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম কর্মীদের বাইরে চলাচল করতে দেখা গেছে। আর শহরের প্রবেশমুখ, মোড়গুলো, মার্কেট, জনসমাগমস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর টহল ছিল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারাই বের হবেন তাদেরই মামলার মুখোমুখি হতে হবে। গ্রেফতারকৃতদের বাইরে যারা আটক হয়েছেন তারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে। আর যদি যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারেন সে ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যত দিন লকডাউন চলবে তত দিন পুলিশের এ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে-রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মহাখালী, বনানী, কুড়িল, গুলশান, মিরপুর, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, মগবাজার এলাকার প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা ছিল। তবে মহল্লার ভেতরের দোকানপাট খোলা ছিল। অলিগলিতে মানুষের আড্ডা, চলাফেরা ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো। খিলগাঁও, শাহজাহানপুর এলাকায় পুলিশের সামনে অলিগলিতে মানুষের অহেতুক চলাচল ও আড্ডা দিতে দেখা গেলেও পুলিশকে নির্বিকার থাকতে দেখা গেছে।

মোড়ে মোড়ে ব্যারিকেড বসিয়ে চলাচলকারী যানবাহনে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে আইনগত ব্যবস্থা। তবে যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে রাজধানীতে মাস্ক বিতরণ করতেও দেখা গেছে। আর বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে কড়া নজরদারি ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ঢাকায় ঢুকতে যানবাহনগুলোকে যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হয়েছে পুলিশ-র‌্যাবের কাছে। এজন্য প্রবেশপথগুলোতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকাভেদে তদারকি কিছুটা কম পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় রাস্তাগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। এ ছাড়া প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে তৎপরতা বেশি থাকলেও বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে সেভাবে তাদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির একটি টিমকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়।

সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় কিছু প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস চলাচল করছে। কিছু রিকশাও আছে। সকল ১০টায় মিরপুরের আনসার ক্যাম্পের বউবাজারের সামনেই সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাজারটি বন্ধ থাকলেও রাস্তাতেই বাজার বসেছে। আর সেখানে কয়েকশ মানুষের জটলা। সবাই মিলে কাঁচাবাজার সারছেন। স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই না থাকলেও বেশির ভাগ মানুষকেই মাস্ক পরতে দেখা গেছে। তবে মাস্ক পরেননি এমন মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সেখানকার মাছের বিক্রেতা মিঠুনকে মাস্ক কেন পরেননি জানতে চাইলে উত্তর দেন, করোনারে আর কতদিন ডরামু! মানুষ আগে খাইয়্যা-পইরা বাঁচতে চায়। এরপর করোনা হইলে দেহা যাইব! উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপণ্যের দোকান সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে বসার বিধান রয়েছে ঘোষিত বিধিনিষেধে।

উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকার রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, এতদিন তো রিকশা চালাতে পেরেছি। আজ (গতকাল) তো বাস্তায় কোনো মানুষ নেই। কী করে সংসার চালাব। উত্তরা জসীমউদ্দিন মোড় এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক রেজা করিম বলেন, রাস্তাঘাট ফাঁকা। কোনো যাত্রী নেই। সামনের দিনগুলো কেমন চলবে?

গতকাল রামপুরা সুপার মার্কেটের সামনে অসহায় দিনমজুরদের কাজের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। আর সামাজিক দূরত্ব এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারেও তাদের বেখেয়াল দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিয়মিত কাজ করতে না পারলে জীবন চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে। এজন্য কঠোর লকডাউন জেনেও তারা মাঠে নেমেছেন। তারা শুধু কাজের সন্ধান চান। লোকজন দেখলেই তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। বলছেন, ভাই কোনো কাজ আছে?
রাজধানীর মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মূল সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল অনেকটা কমেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অলিগলির সড়কে মানুষের চাপ বাড়তে শুরু হয়। সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত মিরপুর ১১, ৬ ও ২ নম্বর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আরও দেখা গেছে, মিরপুর ১১ নম্বরে অবস্থিত নান্নু মার্কেটের আশপাশের সড়কে লোকজন দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। এ এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দলকে দেখে তারা ছোটাছুটি করে আড়ালে চলে যান। আর টহল দল চলে যাওয়ার পর আবারও রাস্তার ফুটপাত অংশে এসে দাঁড়ান। সেখানে অবস্থানরত বাসিন্দাদের মধ্যে কেন সড়কে নেমেছে জানতে চাইলে আবুল কালাম নামের এক যুবক বলেন, পরিস্থিতি বোঝার জন্য রাস্তায় নেমেছেন তারা। মিরপুর ৬ নম্বরে চলন্তিকা বস্তি মোড়েও মানুষের জটলা লক্ষ করা গেছে। অলিগলির সড়কে লোকজন নেমে এসেছেন। মূল সড়কে যানবাহন এবং রাস্তায় নামার লোকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এরপর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের আশপাশ এলাকায় দেখা যায়, মূল সড়কে চলছে রিকশা ও মোটরসাইকেল। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও বের হয়েছেন কেউ কেউ। স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশের সড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকে কয়েকজনকে বের হওয়ার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।

গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা দেওয়া গার্মেন্টসের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী যুগান্তরকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। ফলে অনেক অনুনয়-বিনয় করেও কোনো কাজ হয়নি। এজন্য শেষমেশ বাসায় ফিরে যাচ্ছি।
আরেক ভুক্তভোগী কমলা বেগম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাইয়ের শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে রওয়ানা হয়ে আব্দুল্লাহপুর এসে পুলিশের সহযোগিতা চাই। পুলিশ আমার ভাইকে ময়মনসিংহগামী একটা পণ্যবাহী ট্রাকে উঠিয়ে দিয়ে সহায়তা করে।
যুগান্তরের দনিয়া প্রতিনিধি জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের প্রথম দিন যৌক্তিক কারণ ছাড়াও অনেকে বাসার বাইরে বের হয়েছেন। গতকাল প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া এবং মাস্ক না পরার অপরাধে ৪০ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পথচারী, রিকশার যাত্রী ও রিকশাচালকদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষ থেকে তাদের ফ্রি মাস্ক দেওয়া হয়। এই অভিযানে যাত্রাবাড়ী মোড়ে র‌্যাব-১০ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনার বাস্তবায়নে অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনীর কন্টিনজেন্টসমূহ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌঅঞ্চল থেকে ২৩ কর্মকর্তাসহ ১৯৬ জন নৌসদস্যের ৮টি কন্টিনজেন্টসমূহ সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকাসমূহ টহল ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। চট্টগ্রাম নৌঅঞ্চল থেকে ১২ কর্মকর্তাসহ ১০৮ নৌসদস্যের ৬টি কন্টিনজেন্ট ভোলা সদর, বোরহান উদ্দিন, দৌলত খান, চরফ্যাশন, মনপুরা, লালমোহন, তজুমদ্দিন, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, টেকনাফ, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী এলাকায় কাজ করছে। অন্য দিকে, খুলনা নৌঅঞ্চল থেকে ১১ কর্মকর্তাসহ ৮৮ জন নৌসদস্যের ২টি কন্টিনজেন্ট মোংলা, বাগেরহাট, বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলায় কাজ করছে।
সমুদ্র ও উপকূলীয় এসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি করোনাভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে দূরত্ব বজায় রাখা, কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ সংক্রমণ প্রতিরোধে গৃহীত সব কার্যক্রম অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছেন নৌসদস্যরা। এ ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে সার্বিক সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত রয়েছে নৌবাহিনী।

সারা দেশের চিত্র : ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

চট্টগ্রাম : নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদে লকডাউন কেমন চলছে তা দেখতে আসা ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে লকডাউন দেখতে আসা এবং দোকান খোলায় ৩৭ জনকে জরিমানা করেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তাদের ১৩ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় ২৭১টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশাসহ ৪০টি যানবাহন জব্দ করা হয়। ৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বগুড়া : বগুড়ার ধুনটে কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে দোকান ও মাদ্রাসা খোলা রাখা নিয়ে বিরোধে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পালটাধাওয়া এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত পাঁচজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলার সোনাহাটা বাজার এলাকায় জিনিয়াস মডার্ন মাদ্রাসা খোলা রাখায় মন্ডল স্টোরের মালিক আশিকুর রহমান মানিক এর প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে মাদ্রাসার পরিচালক মহসিন আলী ও গোলাম মোস্তফার সঙ্গে আশিকুর রহমান মানিকের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজনের মাঝে ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

নারায়ণগঞ্জ : অতি বৃষ্টি আর পরিবহণ সংকটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিককে। চাকরি বাঁচাতে হেঁটে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়েছেন তারা, কেউ কেউ দশগুণ ভাড়া দিয়ে রিকশায় গন্তব্যে পৌঁছেছেন। গার্মেন্ট মালিকদের শ্রমিক পরিবহণে নিজস্ব ব্যবস্থা রাখার কথা থাকলেও সেই কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন ৯০ শতাংশ মালিক। বেশির ভাগ গার্মেন্টে শ্রমিক উপস্থিতির সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে বেশি ছিল। অন্য শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখা হয়েছিল।
গাজীপুর : চান্দনা-চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস মোড়ে কাঁচাবাজার, কিছু খাবার দোকান, ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। পোশাক শ্রমিকরা রিকশাযোগে ও হেঁটে কারখানায় কাজ করেছেন। সড়ক-মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়াও মাঝেমধ্যে শ্রমিকবাহী ছোট-বড় যানবাহনও চলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় স্টার লাইট পোশাক কারখানার এক শ্রমিক জানান, মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে হেঁটে আমাকে কারখানায় আসতে হয়েছে। গাড়ি সংকটের কারণে রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে।

বরিশাল : বরিশাল সিটি এলাকাতেই কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে মাঠে রয়েছে ২০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আওতায় ২০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করেছে। এ ছাড়া খোলা ট্রাক ব্যবহার করে বৃষ্টিতে ভিজে নিম্ন আয়ের মানুষ যাতায়াত করেছে। মহাসড়কের টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কে বৃহস্পতিবার সকালে বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করে।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ নগরীতে বিধিনিষেধ না মানাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় বিকাল পর্যন্ত ২৫০টি মামলায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি : ৯টি উপজেলায় কাজ করছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন অমান্য করায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষকে জরিমানা করা হয়েছে।
রাজবাড়ী : মহাসড়কে সচেতনতায় কাজ করেছেন গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম (ডিগ্রি) কলেজের স্কাউট দল ও গ্রামপুলিশের সদস্যরা।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধা শহরের রাস্তায় ছিল যানবাহনের চাপ।
রাজশাহী : বৃষ্টির কারণে লোকজন বাইরে বের না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সে রকম বেগ পেতে হয়নি।
যশোর : যশোরে জেলা প্রশাসনের ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন।
ভোলা : কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ায় দুজনকে ৫ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ১০৪ জনকে জরিমানা করা হয়।
নবাবগঞ্জ : ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জের রাস্তাগুলো অন্যদিনের তুলনায় ছিল বেশ ফাঁকা। সড়কগুলোতে কোনো গণপরিবহণ চলতে দেখা যায়নি। এছাড়া বৃষ্টির কারণেও অধিকাংশ মানুষ তাদের নিজ বাড়িঘরে ছিলেন।
বান্দরবান : পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মানতে জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮ জনকে আটক করা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এদের মধ্যে ১৪ জনকে ৭ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৪ জনকে অর্থদণ্ড প্রদান করেন।

আপনার মন্তব্য জানান