আজ ৩রা নভেম্বর, ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতি হারালো তার অন্যতম শ্রেষ্ট ৪ সন্তানকে। কারার অন্ধকার ঘরে খুনিদের বিকৃত মানসিকতার স্বিকার হলেন বাংলাদেশের ৪ জাতীয় নেতা।
রাজনৈতিক নেতৃত্বেদানের পূর্বে ও নেতৃত্বদানের পাশাপাশি জাতীয় চার নেতার____
চারজনই ল’ পাশ করেছিলেন। আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম ইতিহাসে অধ্যাপনা করেছেন।
কামরুজ্জামান একজন কবিও ছিলেন।
তাজউদ্দীন আহমদ একজন কোরআনে হাফেজ ছিলেন।
মনসুরা আলী পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিও ছিলেন। পাশাপাশি ১৯৪৮ সালে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং পিএলজির ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হন।
কোথায় ছিল মানবতা যখন পানির জন্য চিৎকার করেও মৃত্যূর আগে তাদের পানি দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় জেলখানায় !!!!!
একজন কবি, একজন কোরআনে হাফেজ, একজন শিক্ষক, একজন নেতাকে তো খুনীরা বেয়নেট দিয়ে খুচিঁয়ে খুচিয়েঁ হত্যা করলো। মুক্তিযু্দ্ধে নেতৃত্ব দেওয়াই কি তাদের অপরাধ ????
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার এ পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য তারা আগে ভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিল রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। সে ছিল ফারুকের সবচেয়ে আস্থাভাজন অফিসার। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দলটি হত্যাযঞ্জ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলেহ উদ্দিন। দক্ষিণ এশিয়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থ’নী মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ অ্যা লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
গোলাম মুরশিদ তার ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ গ্রন্থে’ লিখেছেন মোশতাক জেল হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন কেবল ফারুক আর রশিদকে নিয়ে। তিনি ঠিক করেছিলেন, যে কোন পাল্টা অভ্যুত্থান হলে কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হবে। যাতে নতুন সরকার গঠিত হলেও এই নেতারা তাতে নেতৃত্ব দিতে না পারেন।
১৯৭১ এ তারা প্রমাণ করে দেখিয়েছে সৎসাহস থাকলে যে কোন শক্তিকে মোকাবেলা করা যায়।তারা দেখিয়েছে কিভাবে দা, কুড়াল, লগি, বৈঠা নিয়ে একটি দেশকে স্বাধীন করা যায়। বিশ্ববাসী দেখেছে কিভাবে গভীর মনোবল নিয়ে এ দেশের দামাল ছেলেরা অত্যান্ত দুর্ধর্ষ নিয়মিত একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে! এ জাতিকে বার বার প্রতিক্রিয়াশীলরা দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন বারই শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি।যারা এ জঘন্য কাজ করেছে তাদের অনেকেই আজ ইতিহাস।আর যারা বেঁচে থেকে- নিজেদের সভ্য বলে ভাবার চেষ্টা করছি তাদের জন্য এটা একটা অতীব জরুরী কাজ- সকল হত্যার বিচার নিশ্চিত করা।আসুন আমরা সবাই মিলে চিৎকার করে বলি “আইন সবার জন্যে সমান”। সবার বিচার পাওয়ার অধিকার আছে সবার জন্যে বিচারের দ্বার উন্মুক্ত হোক।আসুন, আমরা দলমত নির্বিশেষে জাতীয় চারনেতার মুক্তিযুদ্ধে অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরন করি। ঘৃনা করি, তাদের হত্যাকারী এবং সেই হত্যার পিছনে থাকা এবং হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগী সকল কুচক্রীদের। তাদের হত্যার বিচারের জন্যে সোচ্চার হই। তাদের বিদেহী আত্মার প্রতি অশেষ সন্মান ও শ্রদ্ধা জানাই।