একটি সময়ে পৃথিবীর যেকোনো দেশের নাগরিকদের যেকোনো রাষ্ট্রে অবাধে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় নিজ দেশের বাইরে গমন করা বেশ জটিল হতে থাকে। বর্তমান সময়ে নানাবিধ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে হয়। এসব প্রক্রিয়া রাষ্ট্র অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত মানুষ উচ্চশিক্ষা অর্জন ও কর্মজীবন শুরু করার জন্য বিদেশে গমন করে থাকে। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া যতটা সহজ, বরং কর্মজীবন শুরু করা তারচেয়ে বেশ কঠিন।
আপনি যদি দেশের বাইরে কর্মজীবন শুরু করতে চান, তবে আপনার শুধুমাত্র ব্যক্তিগত দক্ষতা থাকলেই হবে না, বরং যে দেশে ক্যারিয়ার গড়তে চান, সে দেশে কীভাবে বাহিরের রাষ্ট্রের নাগরিকরা কাজ করার সুযোগ পেতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে এবং তদানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই আপনি সে দেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন, অন্যথায় আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্যারিয়ার গড়তে ব্যর্থ হবেন।
বিশ্বের বেশ কিছু রাষ্ট্র রয়েছে, যেসব দেশে সাধারণত মানুষ ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছা পোষণ করে থাকে। তেমনি একটি রাষ্ট্র হলো যুক্তরাজ্য। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী অনেক মানুষই যুক্তরাজ্যে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু কীভাবে যুক্তরাজ্যে কাজের সুযোগ পেতে হয়, কিংবা আদৌ সেখানে কাজ করার জন্য উপযুক্ত ও অনুমতিপ্রাপ্ত কি না, তা অনেকেই জানেন না।
যুক্তরাজ্যের নিয়ম নীতি অনুযায়ী, পৃথিবীর বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের নাগরিকেরা এ দেশে কাজ করার জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে থাকে। আপনি যদি যুক্তরাজ্যে ক্যারিয়ার শুরু করতে চান; তবে পূর্বেই জেনে নিন, আপনি যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ নাগরিকদের মতো সরাসরি কাজ করার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত কি না। আর যদি আপনার সরাসরি ক্যারিয়ার শুরু করার অধিকার না থাকে, তবে কোন প্রক্রিয়ায় সেখানে কাজ করার জন্য অনুমতি গ্রহণ করবেন। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
আপনি কি যুক্তরাজ্যে কাজ করার যোগ্য?
ব্রিটিশ নাগরিক ছাড়াও পৃথিবীর বেশ কিছু দেশের নাগরিকরা যুক্তরাজ্যে সরাসরি কাজ করার জন্য যোগ্য হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এদের কাজ শুরু করার জন্য কাজের অনুমতি পত্র সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় না। কীভাবে নিশ্চিত হবেন, আপনি যুক্তরাজ্যে সরাসরি ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন কি না? আপনি যদি ব্রিটিশ নাগরিক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহের অধিবাসী ও সুইস জাতীয়তাধারী ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তবে আপনি কাজের অনুমতি পত্র ছাড়াই, যুক্তরাজ্যে সরাসরি কাজ শুরু করতে পারবেন।
সরাসরি কাজ করার জন্য অধিকার না থাকলে কী করবেন?
আপনি যদি ব্রিটিশ নাগরিক কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহের নাগরিক না হয়ে থাকেন, তবে যুক্তরাজ্যে কাজ পেতে আপনাকে একটি ভিসা এবং কাজের অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
ভিসা
আপনি আপনার দেশের ব্রিটিশ বৈদেশিক মিশন ও ব্রিটিশ দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, শুধুমাত্র ভিসা হলেই আপনি যুক্তরাজ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন না, বরং কাজ শুরু করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কাজের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
কাজের অনুমতিপত্র
আপনি যদি যুক্তরাজ্যে একটি চাকরি পেয়ে থাকেন এবং আপনার ভিসাও থাকে, তবুও আপনাকে একটি কাজের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে।আপনি সরাসরিভাবে কাজের অনুমতি পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আপনার নিয়োগকর্তাকে আপনার পক্ষ থেকে আবেদন করতে হবে, তবেই আপনি খুব সহজেই কাজের অনুমতি পত্র পেয়ে যাবেন।
ভিসার আবেদন করতে স্পন্সর প্রয়োজন হবে কী?
সাধারণত আপনি যদি যুক্তরাজ্যে কাজের জন্য ভিসার আবেদন করতে চান, তবে আপনাকে যুক্তরাজ্যের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে চাকরির অফারসহ স্পন্সরশিপ পেতে হবে। আবার আপনি যদি ২ বছরের অধিক সময় যুক্তরাজ্যে বসবাস ও কাজ করতে আগ্রহী থাকেন, আপনার বয়স আঠারো থেকে ত্রিশের মধ্যে হয় এবং আপনার নিকটে প্রায় ২ হাজার পাউন্ড বা প্রায় ২ লাখ টাকা সঞ্চয় থাকে, তবে স্পন্সরশিপ ছাড়াই ইয়ুথ মোবিলিটি স্কিম ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আপনার সঙ্গে কিংবা আপনার অধীনে কোনো শিশু যুক্তরাজ্যে রাখতে চাইলে, এই ভিসা আবেদন করার জন্য আপনি অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। মোটামুটিভাবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের নাগরিকদেরই ইয়ুথ মোবিলিটি স্কিম ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
কোন ধরনের চাকরির জন্য আপনি যোগ্য?
চাকরির যোগ্যতা মূলত ব্যক্তির নিজস্ব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও কোয়ালিফিকেশনের উপরে নির্ভর করে থাকে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বাহিরের দেশের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ ও স্পন্সরশিপ দিয়ে থাকে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবেও স্পন্সরশিপ দিতে পারে। আপনাকে অনলাইনে বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞপ্তিগুলো খোঁজ করতে হবে।
তারপর আপনারা যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী আবেদন পত্র জমা দিয়ে কাজ করার সুযোগ অর্জন করতে হবে। আপনি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তাদের কাছে যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হলে, খুব সহজেই যুক্তরাজ্যে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন।আপনি যুক্তরাজ্যে কর্মজীবন শুরু করতে চাইলে, এসব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে কর্মপন্থা গ্রহণ করুন, তবে খুব সহজেই আপনার স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হবেন
Im interested