নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ১৫ লাখ ৫০ হাজার ২০৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যা ৩০ সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫৫ জনে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ দিনে মোট ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫২ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে। এদিকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ৯৯৬ জন, যা ৩০ সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৯ জনে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার ৪৮৩ জন। এ হিসেবে সেপ্টেম্বর মাসে গড় শনাক্তের হার ১২.৭০ শতাংশ। দেশে গত দুই মাসে করোনার সংক্রমণ ধাপে ধাপে কমে আসার তথ্য পাওয়া গেলেও বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। বরং এ পরিসংখ্যানে বড় ধরনের শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাইয়ের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে বিমানযাত্রীদের করোনা টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক হওয়ায় প্রবাসী কর্মীসহ হাজার হাজার বিদেশগামী সুস্থ মানুষ শুধু নেগেটিভ সনদ সংগ্রহের জন্য নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন, যা প্রতিদিনের নমুনা পরীক্ষার মোট সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তাই টেস্টের সংখ্যা অনুযায়ী শনাক্তের হার কম দেখাচ্ছে।
শুধুমাত্র সনদ সংগ্রহের জন্য নমুনা পরীক্ষা করানো দেড় লাখ বিদেশগামী সুস্থ বিমানযাত্রীর হিসাব বাদ দেওয়া হলে করোনার উপসর্গ নিয়ে টেস্ট করানো মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫২ জন। এদের ওপর ভিত্তি করে করোনায় শনাক্তের হার নির্ণয় করা হলে তা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএবি) সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী কর্মী,শিক্ষার্থী ও পর্যটকসহ প্রায় দেড় লাখ মানুষ বিদেশে গেছেন। যাদের প্রত্যেককেই করোনা টেস্ট করাতে হয়েছে।
এদিকে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী গত ২৩ জুলাই থেকে বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য যে ১৬টি সরকারি হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে কোভিড পরীক্ষা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে তার কয়েকটিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে দেড় থেকে দুই শতাংশের পজিটিভ রেজাল্ট আসছে; বাকি সবারই নেগেটিভ। তবে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন-রাজধানী ঢাকার এই তিন প্রতিষ্ঠানেও শনাক্তের হার সামান্য কিছুটা বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলোজি বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, শনাক্তের হার কম বলেই করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নমুনা পরীক্ষা কমেছে, তাই শনাক্ত কমছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের করোনার প্যাটার্ন মিলছে না উলেস্নখ করে এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, সংক্রমণের হার কমছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হলে আরও টেস্ট বাড়াতে হবে। এতে কী ধরনের ফল আসে তার ওপর নির্ভর করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে সবার ইনফেকশন হয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেজন্য সংক্রমণ কমে যাচ্ছে, এটা ঠিক নয়। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্বের মতো স্বাস্থ্যবিধিও আমরা মেনে চলছি না, তাই প্রকৃত অবস্থা বুঝতে আরও সময় লাগবে।